এমন বিরল ঘটনা দেখা মেলা ভার । এক সনাতন ধর্মাবলম্বী যুবক সারা শহরে ঘুরে ঘুরে দিচ্ছে ফ্রী ইফতারের দাওয়াত । রোজার প্রথমদিন থেকেই অসহায়-দুঃস্থ মানুষদের তিনি এ দাওয়াত দিচ্ছেন । যা সবাইকে রিতিমতো অবাক করেছে । মানবতার এমন বিরল দৃষ্টান্ত দেখে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষসহ সকলেই খুশী । তার ডাকে সাড়া দিয়ে কমপক্ষে ১৫০-২০০ মানুষ প্রতিদিন করছে ইফতারী ।
জানাযায়, সৌভিক পোদ্দার ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলি সড়কের সৌরেশ পোদ্দারের একমাত্র ছেলে । বয়স ২৪ বছর। নিজে পরিপূর্ণ সনাতন ধর্মাবলম্বীর একজন । ইফতারের আগে মাইক নিয়ে ছুটছেন মুসলমানদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ধর্মীয় অনুশাষন ইফতারের দাওয়াত দিতে । ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলি সড়কের বাসিন্দা সৌভিক রোজার প্রথম দিন থেকেই অত্যন্ত ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে সারা শহরজুড়ে এ দাওয়াত দিয়ে চলেছেন । তার এ দাওয়াত গ্রহণ করে কয়েকশ দুঃস্থ, অসহায় নারী পুরুষ গ্রহণও করছেন ইফতারি । এমন দৃষ্টান্ত তিনি উপস্থাপন করেছেন যা সবাইকে অবাক করেছে । তিনি জানান, মানুষকে ভালোবাসার চাইতে বড় কিছু নেই এই পৃথিবীতে ।
সৌভিক পোদ্দার জানান, ইয়োথ সান নামের একটি সংগঠনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন সৌভিকসহ আরো কমপক্ষে ১২ জন যুবক । যারা সারাবছরই মানুষের জন্য কাজ করে । ২০১৩ সালে গঠিত সংগঠনটি এপর্যন্ত বিকলাঙ্গদের হুইল চেয়ার, করোনা মহামারিতে খাবার-ওষুধ-অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ, বন্যার সময় খাদ্য সরবরাহসহ শীতার্থদের পাশে দাড়ানো থেকে বেশিরবাগ মানবিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত । এ সংগঠনের কর্মী সৌভিক সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন । যা সবাইকে আরো বেশী মানবিক ও সম্পৃতির বন্ধনে আবদ্ধ করবে বলে মনে করেন সমাজের মানুষেরা ।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, শহরের উজির আলী স্কুল প্রাঙ্গনে এভাবেই সারিবদ্ধভাবে ইফতারী করে সাধারণ মানুষগুলো । যারা কেউ শহরে ভ্যান, রিক্তা, ইজিবাইক চালান। অথবা শহরে আসেন ভিক্ষাবৃত্তি করতে । যাদের একমুঠো খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা তারা মুরগির গোশের ঝোল ও সবজি খিচুড়ি দিয়ে পেটপুরে ইফতারী করে ফেরেন আপন টিকানায় ।
ইফতার করতে আসা রিক্সাওয়ালা রহমান বিশ্বাস বলেন, এমনই হওয়া উচিত ।
আরেক ভ্যান চালক কামাল পাশা বলেন, আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাই অবস্থা । ওনাদের জন্য সেই প্রথম রোজা থেকে ইপতরা করতে পারি । খাবার মান খুব ভালো । যা আমাদের মতো যারা বাইরে থেকে এসে শহরে দুইটাকা রোজগার করে তাদের জন্য কেউ ভাবে না । কিন্তু এখানে আসলে আমরা একবেলা পেটপুরে খেতে পাই ।
ইয়থ সান এর পরিচালক মাকিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ইয়থ সান অসহায়দের জন্য কাজ করে বিভিন্ন বিত্তবান মানুষের সহায়তায় । সৌভিকের দাওয়াতে শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে প্রতিদিন চলে ১৫০-২০০ জনের ফ্রী ইফতারী । যা খেয়ে রোজাসহ ক্ষুধা নিবারণ করে দরিদ্র-গরীব নারী পুরুষের দল ।