টার্ম ফাইনাল বয়কটসহ ৬ দফা দাবিতে উত্তাল বুয়েট।
রাজনৈতিক ব্যানারে ২৭ তারিখ দিবাগত রাত ২ টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সহসভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বুয়েটের অডিটোরিয়ামের সেমিনার রুমে প্রোগাম করেছে ছাত্রলীগ। মোবাইল ফোনে ধারনকৃত ভিডিওতে রাত ২ টার দিকে কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে দলবেধে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এসময় তারা প্রধান ফটকের নিরাপত্তারক্ষীদের শাসিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ছাত্রলীগের কোন একটি প্রোগ্রাম সেমিনার রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও প্রধান ফটকের বাইরের রাস্তায় রাত ২টার পর অসংখ্য মোটরসাইকেল দাঁড়ানো লক্ষ্য করা গিয়েছে । এসময় আনুমানিক ১০০-১৫০ জন ফুলের মালা, পুষ্পস্তবক নিয়ে আসে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা বাংলা কলেজ এবং তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি ঘোষনা ও পদপ্রাপ্তদের ফুলেল শুভেছা প্রদানের জন্য বুয়েট অডিটোরিয়ামের সেমিনার রুমকে ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করেছে।
এই ঘটনা জানাজানি হলে, বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদেরই সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য আইডি কার্ড দেখাতে হয়, বুয়েটের মনোগ্রাম যুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয় না; এমনকি শিক্ষার্থীদের রাত ১০:৩০ টার পরে ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থান করতে দেওয়া হয় না, সেখানে বহিরাগতরা কোন ক্ষমতাবলে নিশীথ রজনীতে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে? আর এত জায়গা থাকতে বুয়েটেই কেন, কী তাদের উদ্দেশ্য?
আজ স্টুডেন্ট বডি দ্বারা পেশ করা দাবীসমূহ –
১. ২৮ মার্চ মধ্যরাতের ক্যাম্পাসে এমন অনুপ্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিমালা এর গুরুতর লঙ্ঘন এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক চর্চা। এমন নীতিমালা বহির্ভূত রাজনৈতিক চর্চায় সে মধ্যরাতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বী। যে ঐ বিশেষ রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে পূর্বে ক্যাম্পাসের অরাজনৈতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে তার পদ থেকে অব্যাহতি নিবে বলে জানায়, কিন্ত পরবর্তীতে এবং বর্তমানে সে অত্যন্তে প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক চর্চা চলমান রেখেছে। এবং ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বহিরাগত দের সাথে নিরঙ্কুশ যোগাযোগ, তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানো, গার্ডদের সাথে কথা বলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সের সাথে সাক্ষাত, তাদের গাড়ি বের করানো কিংবা প্রবেশ করানো এই সকল সক্রিয় ভূমিকায় তাকে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে আমরা বুয়েটের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি এর বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল এর দাবি জানাচ্ছি।
২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সাথে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার চাই।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন কিভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক আসতে হবে।
৪. উপরোক্ত ১ নং ,২ নং এবং ৩নং দাবি আগামীকাল সকাল ৯ টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ডিএসডাব্লু এর পদত্যাগ চাই ।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল সহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে না – এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।